Skip to main content

আরব বিশ্ব ও অন্যান্য

৯০ এ সোভিয়েট রাশিয়া ফল করার পর হার্বাড এর প্রফেসর হান্টিংটন ফরেন এফেয়ার্স ম্যাগাজিনে (Foreign Affairs) একটা লেখা লেখেন ১৯৯৩ এর দিকে, clashes of Civilization নামে । পরে ৯৪ এর দিকে সেটা বই আকারে বের হয়। সে বই বা থিসিসে দেখানো হয় বিশ্বের পরবর্তী যুদ্ধের কারন হবে সভ্যতা । বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে দিন শেষে পরবর্তী দিনের জন্য কি কি করতে হবে তা রাতে বিছানায় শুয়ে ঠিক করে রাখা । এ বইও অনেকটা তেমন রাতের বেলা ঠিক করে রাখা পরবর্তী দিনের কর্মসুচী।

সভ্যতা বলতে তিনি মোটা দাগে কতগুলো ভাগে ভাগ করেছেন । তার মতে বর্তমান পাশ্চাত্য সভ্যতা যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত । ১৯০০ সালে যেখানে পাশ্চাত্য সারা বিশ্ব নিয়ন্ত্রন করতো , সেখানে আজ পাশ্চাত্য তার জন্মভূমিতে আবদ্ধ হয়ে গেছে। হয়তো আমাদের কাছে জিনিসটা খটকা লাগতে পারে , কিন্তু সভ্যতা যেমন অনেক সময় নিয়ে তার শীর্ষে যায় তেমনি পতনেও তেমন সময় লগে। ৪০০ বছর সময় নিয়ে পাশ্চাত্য ১৯০০ সালের দিকে তার পীকে ছিল এখন ধীর লয়ে তার পতন হচ্ছে ।

৯০ এর পর থেকে বাই পোলার বিশ্ব ব্যাবস্থা থেকে মাল্টিপোলার বিশ্বের দিকে অগ্রসর হচ্ছে । রাশিয়া-আমেরিকার জায়গাতে এখন ইউ, ব্রাজিল , দঃআফ্রিকা, চীন ইন্ডিয়া , দঃপূর্ব এশিয়া নতুন নতুন আঞ্চলিক শক্তি হিসাবে তৈরি হচ্ছে । সভ্যতার নিজস্ব জীবনি শক্তি বার বার তাকে চেষ্টা করে পতনের হাত থেকে বাচার চেষ্টা করতে । এখন যেমন একক পরাশক্তি হচ্ছে আমেরিকা , তা আর বেশি দিন থাকবে না । ইকোনোমিস্ট এর এক প্রজেকশনে দেখা যাচ্ছে, অর্থনীতিতে চীন আমেরিকাকে টপকে যাতে অন্তত ২০২২ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে , অনে দিকে ইন্ডিয়া , দঃপূর্ব এশিয়া এর অবস্থান সংহত হচ্ছে দিনকে দিন।

এমন এক পরিস্থিতিতে আমেরিকার চিন্তা হচ্ছে তার সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ কে কে হতে পারে, সে তালিকার প্রথমে আছে চীন , চীনের মিলিটারি , ইকোনমি, পলিটিকাল পাওয়ার সব ক্ষেত্রে আমেরিকার জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে যাচ্ছে , অন্যদিকে প্রতিপক্ষ হিসাবে দেখানো হয়েছে মুসলিম বিশ্বকে । খুবই খটকা লাগার মতো ব্যাপার !!! যারা এখনো ফটোশপের কাজ করা কাবার উপরে ফেরেস্তা নামার ছবি প্রিন্ট করে ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখে, বিজ্ঞান বলতে এখনো বুঝে সুরা ইয়াসিন তারা কিভাবে আমেরিকার মতো দেশের প্রতিপক্ষ হয় ?

হয় !! কারন সম্ভাব্য জনসংখ্যা। যুবস্ফীতি বলে একটা শব্দ , যা নিয়ে আমরা খুব আশাবাদী হই, তা যে যুদ্ধের জন্য কতবড় একটা বারুদের ডিপো, এটা নিয়ে একটু পড়লেই দেখা যায় , সি আই এ এর ওয়েব সাইটে প্রতিটা দেশের জনসংখ্যা ৩ ভাগে ভাগ করা থাকে ০-১৪বছর , ১৫-৬৪ এবং ৬৪+ । ইকোনোমিস্ট আরব বসন্ত শুরু হবার পর আরব দেশ গুলোর বিভিন্ন ইন্ডিকেটর নিয়ে একটা লেখা দেয় যাতে আলাদা করে ১৫-৩৫ এর জনসংখ্যার কত উল্লেখ্ করা হয় আরব লীগ ম্যাপ  । থিসিসের ভাষ্যমতে ভবিষ্যতে এই নতুন জনসংখ্যা তার নিজের প্রয়োজনে বিপ্লব/যুদ্ধ জড়াবে আর অন্যদিকে চীনের আছে যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করার ক্ষমতা ।

আফগান ইরাক এর পর এবার লিবিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত হত্যার কারনে যে খেলা শুরু হবে তা এই অশিক্ষিত বর্বর মুসলিমদের চীনের সাথে সম্ভাব্য জোট বাধতে না দেয়ার একটা ধাপ মাত্র।

হান্টিংটনের লেখা থিসিস পড়তে চাইলে ডাউনলোড করে নিতে পারেন ।

Popular posts from this blog

প্রাগৈতিহাসিক - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

সমস্ত বর্ষাকালটা ভিখু ভয়ানক কষ্ট পাইয়াছে। আষাঢ় মাসের প্রথমে বসন্তপুরের বৈকুণ্ঠ সাহার গদিতে ডাকাতি করিতে গিয়া তাহাদের দলকে - দল ধরা পড়িয়া যায়। এগারজনের মধ্যে কেবল ভিখুই কাঁধে একটা বর্শার খোঁচা খাইয়া পলাইতে পারিয়াছিল। রাতারাতি দশ মাইল দূরের মাথা - ভাঙা পুলটার নিচে পেঁৗছিয়া অর্ধেকটা শরীর কাদায় ডুবাইয়া শরবনের মধ্যে দিনের বেলাটা লুকাইয়া ছিল। রাত্রে আরো ন ক্রোশ পথ হাঁটিয়া একেবারে পেহলাদ বাগ্দীর বাড়ি চিতলপুরে। পেহলাদ তাহাকে আশ্রয় দেয় নাই। কাঁধটা দেখাইয়া বলিয়াছিল , ' ঘাওখান সহজ লয় স্যাঙ্গাত। উটি পাকব। গা ফুলব। জানাজানি হইয়া গেলে আমি কনে যামু ? খুনটো যদি না করতিস _' ' তরেই খুন করতে মন লইতেছে পেহলাদ। ' ' এই জনমে লা , স্যাঙ্গাত। ' বন কাছেই ছিল , মাইল পাঁচেক উত্তরে। ভিখু অগত্যা বনেই আশ্রয় লইল। পেহলাদ নিজে বাঁশ কাটিয়া বনের একটা দুর্গম অংশে সিনজুরি গাছের নিবিড় ঝোপের মধ্যে তাহাকে একটা মাচা বাঁধিয়া দিল। তালপাতা দিয়া একটা ...

সিরাজুল আলম খান - ব্ল্যাক সোয়ান

মুক্তিযুদ্ধ চলা কালে ট্রেনিং সেন্টারে (ফোল্ডার হাতে) পরিচিতি :  সিরাজুল আলম খান, নোয়াখালীতে ১৯৪১ সালে জন্ম নেয়া এক জন ব্যাক্তি যে বাংলাদেশের জন্মের সাথে জড়িত অত্যান্ত নিবিড় ভাবে। অবিবাহিত একজন মানুষ যাকে বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে সম্মক অবহিতজনের কাছে পরিচিত রহস্যপুরুষ হিসাবে, এছাড়া রাজনৈতিক নেতাদের কাছে তিনি পরিচিত তাত্ত্বিক (theorist) হিসাবে। সিরাজুল আলম খান ভিন্ন ভিন্ন তিন মেয়াদে প্রায় ৭ বছর কারাভোগ করেন। সিরাজুল আলম খান মেধাবী ছাত্র হিসাবে শিক্ষায়তনে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সিরাজুল আলম খানের বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী অঙ্ক শাস্ত্রে হলেও দীর্ঘ জেল জীবনে তিনি দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা, রাজনীতি-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজ বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, সামরিক বিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, সংগীত, খেলাধুলা সম্পর্কিত বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেন। ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপর গড়ে উঠে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য এবং দক্ষতা। সেই কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক নিযুক্ত হন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন রাজ্যের অসকস বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৬-’৯৭ সনে। ...

বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা

১৯২৬ সালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একটি ভাষন দেন যার নাম “বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা” । এটি বাঙলা প্রাদেশিক সম্মেলনে প্রদান করেন। পরে তা হিন্দু সংঘ পত্রিকায় ছাপা হয় ১৯ শে আশ্বিন ১৯৩৩ সালে। জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক  এর ভাষায় ১৯৩০ সালের দিকে প্রকাশিত শরৎচন্দ্রের বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা পর এত ( আহামদ ছফার বাঙালি মুসলমানের মন ) প্রভোক্যাটিভ রচনা বাংলা ভাষায় পড়ি নাই। কোন একটা কথা বহু লোকে মিলিয়া বহু আস্ফালন করিয়া বলিতে থাকিলেই কেবল বলার জোরেই তাহা সত্য হইয়া উঠে না । অথচ এই সম্মিলিত প্রবল কন্ঠস্বরের একটা শক্তি আছে । এবং মোহও কম নাই । চারিদিক গমগম করিতে থাকে – এবং এই বাস্পাচ্ছন্ন আকাশের নীচে দুই কানের মধ্যে নিরন্তর যাহা প্রবেশ করে , মানুষ অভিভূতের মতো তাহাকেই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিয়া বসে । propaganda বস্তুত এই-ই । বিগত মহাযুদ্ধের দিনে পরস্পরের গলা কাটিয়া বেড়ানই যে মানুষের একমাত্র ধর্ম ও কর্তব্য , এই অসত্যকে সত্য বলিয়া যে দুই পক্ষের লোকেই মানিয়া লইয়াছিল , সে ত কেবল অনেক কলম এবং অনেক গলার সমবেত চীৎকারের ফলেই । যে দুই- একজন প্রতিবাদ করিতে গিয়াছিল ,...