Skip to main content

Hang Around


সে অনেক কাল আগের কথা , তখন তপু ক্লাস এইটে পড়ে। তপুর বাবা সিরিয়াস টাইপের হুমায়ন ভক্ত। তার উপর আবার হিমু সিরিজ নতুন বের হওয়া শুরু করছে । মহা মানব জিনিসটার প্রতি তপুর বাবা বেশ ইন্টারেস্ট ফিল করতে থাকেন । এক দিন তিনিও হিমুর বাবার মত ডিসিশন নিয়ে ফেলেন ছেলেকে মহা মানব বানাবেন । হিমু পড়ে যেহেতু জানতে পেরেছেন হিমু খালি পায়ে হাটে , তাই তিনি ছেলেকে জুতো ছাড়াই স্কুলে পাঠান । বর্ষাকাল , রাস্তায় কাদাপানিতে ছড়াছড়ি , তপু তার মাঝ দিয়ে হেটে যাচ্ছে । পা ফেলে আর তার পাশ থেকে লোকজন লাফ দিয়ে দু দিকে সরে যায়। পা ফেলছে আর লোক সরে যাচ্ছে ।
এই করে স্কুলে যখন উপস্থিত হয়, ক্লাসের বুটি মেডাম (আসলে তার নাম রোকসানা, উনার পাছা বড়। তপুর বন্ধু রাশেদ তপুকে বলেছে পাছা বড় হলে বুটি বলতে হয় , তবে সামনে বলা যাবে না। ) তাকে দেখে বলে এই তুমি কে ?
- ম্যাডাম আমি তপু।
- তপু !!! তোমার এই অবস্থা কেন ? গায়ে এতো ময়লা কাদা কেন ? উহু কি গন্ধ !!!
- ম্যাডাম , আমি মহা মানব হচ্ছিতো , তাই।
- কি ????????? কি মানব ?????
- ম্যাডাম মহা মানব।
আজকে থেকে বাবা আমাকে মহা মানব বানাচ্ছেন। মহা মানবেরা খালি পায়ে থাকেন , তাই আজ থেকে আমি খালি পায়ে থাকবো । ম্যাডাম আপনার কাছে সুই আছে ? মনে হচ্ছে পায়ে কিছু একতা ফুটেছে ।

সেদিন তপুর বাবাকে স্কুলে ডেকে সাবধান করে দেয়া হয় , যদি এমন আর কখনো হয় তবে তপুকে টিসি দিয়ে দেয়া হবে । তাতে তপুর বাবা মনক্ষুন্ন হয়ে বাসায় ফিরে আসেন । এক সপ্তাহ চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেন। না মহা মানব না ছেলেকে গায়ক বানাবেন । গায়ক হলে দেশের সকলে চিনবে , সবার প্রিয় হতে পারবে , মহা মানবেরাও তো সবার প্রিয় গায়ক হওয়া বরং অনেক সুবিধার । খালি পায়ে হাটা লাগবে না , না খায়ে দিন যাপন করতে হবে না । কিন্তু সবার মনে ঠাই করে নিতে পারবে ।

এই চিন্তা থেকে বিখ্যাত সংগীত পরিচালক বাটাম এর সাথে যোগাযোগ করলেন। ২ লাখ টাকার বিনিময়ে একটা গান লিখিয়ে ও সুর করিয়ে নিলেন । গানটা হচ্ছে “মেয়ে , একদিকে গাং তোমার অন্যদিকে পানি ”
২০০৮ এ তপুর এই গাং পানি গানটা হেব্বি হিট করে । সে হিটের চোটে তপুর মাথায় সর্টসার্কিট হইয়া যায় । ৩ মাস মেন্টাল হসপিটালে থাকার পর আবার স্বাভাবিক (?) জীবনে ফেরত আসে । কিন্তু সর্ট সার্কিটের ক্ষতি কি আর সহজে সারে !! hang over শেষে hang around যেমন , তেমন অবস্থা চলছে।

পাদটিকা : ' মেয়ে ',' একদিক ',' অন্যদিক ' এই তিন শব্দ ছাড়া তপু যদি গান গাইতে পারবে , বুজবেন তপুর hang around শেষ হয়ছে ।

Popular posts from this blog

সিরাজুল আলম খান - ব্ল্যাক সোয়ান

মুক্তিযুদ্ধ চলা কালে ট্রেনিং সেন্টারে (ফোল্ডার হাতে) পরিচিতি :  সিরাজুল আলম খান, নোয়াখালীতে ১৯৪১ সালে জন্ম নেয়া এক জন ব্যাক্তি যে বাংলাদেশের জন্মের সাথে জড়িত অত্যান্ত নিবিড় ভাবে। অবিবাহিত একজন মানুষ যাকে বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে সম্মক অবহিতজনের কাছে পরিচিত রহস্যপুরুষ হিসাবে, এছাড়া রাজনৈতিক নেতাদের কাছে তিনি পরিচিত তাত্ত্বিক (theorist) হিসাবে। সিরাজুল আলম খান ভিন্ন ভিন্ন তিন মেয়াদে প্রায় ৭ বছর কারাভোগ করেন। সিরাজুল আলম খান মেধাবী ছাত্র হিসাবে শিক্ষায়তনে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সিরাজুল আলম খানের বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী অঙ্ক শাস্ত্রে হলেও দীর্ঘ জেল জীবনে তিনি দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা, রাজনীতি-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজ বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, সামরিক বিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, সংগীত, খেলাধুলা সম্পর্কিত বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেন। ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপর গড়ে উঠে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য এবং দক্ষতা। সেই কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক নিযুক্ত হন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন রাজ্যের অসকস বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৬-’৯৭ সনে। নি

প্রাগৈতিহাসিক - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

সমস্ত বর্ষাকালটা ভিখু ভয়ানক কষ্ট পাইয়াছে। আষাঢ় মাসের প্রথমে বসন্তপুরের বৈকুণ্ঠ সাহার গদিতে ডাকাতি করিতে গিয়া তাহাদের দলকে - দল ধরা পড়িয়া যায়। এগারজনের মধ্যে কেবল ভিখুই কাঁধে একটা বর্শার খোঁচা খাইয়া পলাইতে পারিয়াছিল। রাতারাতি দশ মাইল দূরের মাথা - ভাঙা পুলটার নিচে পেঁৗছিয়া অর্ধেকটা শরীর কাদায় ডুবাইয়া শরবনের মধ্যে দিনের বেলাটা লুকাইয়া ছিল। রাত্রে আরো ন ক্রোশ পথ হাঁটিয়া একেবারে পেহলাদ বাগ্দীর বাড়ি চিতলপুরে। পেহলাদ তাহাকে আশ্রয় দেয় নাই। কাঁধটা দেখাইয়া বলিয়াছিল , ' ঘাওখান সহজ লয় স্যাঙ্গাত। উটি পাকব। গা ফুলব। জানাজানি হইয়া গেলে আমি কনে যামু ? খুনটো যদি না করতিস _' ' তরেই খুন করতে মন লইতেছে পেহলাদ। ' ' এই জনমে লা , স্যাঙ্গাত। ' বন কাছেই ছিল , মাইল পাঁচেক উত্তরে। ভিখু অগত্যা বনেই আশ্রয় লইল। পেহলাদ নিজে বাঁশ কাটিয়া বনের একটা দুর্গম অংশে সিনজুরি গাছের নিবিড় ঝোপের মধ্যে তাহাকে একটা মাচা বাঁধিয়া দিল। তালপাতা দিয়া একটা

বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা

১৯২৬ সালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একটি ভাষন দেন যার নাম “বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা” । এটি বাঙলা প্রাদেশিক সম্মেলনে প্রদান করেন। পরে তা হিন্দু সংঘ পত্রিকায় ছাপা হয় ১৯ শে আশ্বিন ১৯৩৩ সালে। জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক  এর ভাষায় ১৯৩০ সালের দিকে প্রকাশিত শরৎচন্দ্রের বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা পর এত ( আহামদ ছফার বাঙালি মুসলমানের মন ) প্রভোক্যাটিভ রচনা বাংলা ভাষায় পড়ি নাই। কোন একটা কথা বহু লোকে মিলিয়া বহু আস্ফালন করিয়া বলিতে থাকিলেই কেবল বলার জোরেই তাহা সত্য হইয়া উঠে না । অথচ এই সম্মিলিত প্রবল কন্ঠস্বরের একটা শক্তি আছে । এবং মোহও কম নাই । চারিদিক গমগম করিতে থাকে – এবং এই বাস্পাচ্ছন্ন আকাশের নীচে দুই কানের মধ্যে নিরন্তর যাহা প্রবেশ করে , মানুষ অভিভূতের মতো তাহাকেই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিয়া বসে । propaganda বস্তুত এই-ই । বিগত মহাযুদ্ধের দিনে পরস্পরের গলা কাটিয়া বেড়ানই যে মানুষের একমাত্র ধর্ম ও কর্তব্য , এই অসত্যকে সত্য বলিয়া যে দুই পক্ষের লোকেই মানিয়া লইয়াছিল , সে ত কেবল অনেক কলম এবং অনেক গলার সমবেত চীৎকারের ফলেই । যে দুই- একজন প্রতিবাদ করিতে গিয়াছিল , আসল কথা