Skip to main content

মিকচার এখন শেষের দিকে

তখন সবে অক্ষর চিনতে শুরু করেছি। সে বয়েসের কল্পনার, উদ্ভাবনী শক্তির প্রখরতা অস্বাভাবিক । আমার ২ মামার আর আমার বয়েস কাছাকাছি হবার কারনে গ্রামে গেলে এক সাথে সারাদিন ঘুড়াঘুড়ি , ফুটবল, গোল্লাছুট এর দুধভাত হবার সম্মান পেতাম। বক এর ডিম দেখিয়ে বলতো, গুইসাপের ডিম। মামার একটা সার্ভিস ট্রলির চাকা ছিল যা কখনোই ৫ মিনিটের বেশি নিয়ে খেলতে পেতাম না , কারন সেটা ছিল রকেটের চাকা। আগের বর্ষার সময় গ্রামের উপর দিয়ে রকেট যাবার সময় মামা তার গুলতি দিয়ে রকেট এর ইঞ্জিন ‘ ভচকাইয়া দিছিল ’ । আমি গ্রামে যখন গিয়ে ছিলাম তখন মাত্র একটাই চাকা মামার কাছে আছে । ২টা তার বন্ধুদের দিয়ে দিয়েছে , আর ৩টা ট্রেডঅফ করে ৫ নাম্বার ডিয়ার ফুটবলের ব্লাডার নিয়েছে। 

রাতে এক সাথে ঘুমানোর ভুত কিভাবে মামাকে আর একটু হলেই কলিজা খেয়ে ফেলতো, কিভাবে মাছের বেশে দুপুরে পরীরা পুকুরের পাড়ের কাছে এসে বসে থাকে আর চান্স পেলে কিভাবে মানুষ মারে, কোন কোন গাছে ভুতেরা বাসা বানিয়েছে , কোন ডালে কার এপার্টমেন্ট ইত্যকার কথা বার্তায় রাত আটটা থেকে নয়টা সারে নয়টা পর্যন্ত চলার পর ঘুমের আগে বাইরে এসে হিসু করার মত সাহস থাকতো না ত্রি-মাস্কেটিয়ার এর । ৫ ব্যাটারির টর্চ , ২ হ্যারিকেন বাইরে এনে আমাদের হিসু করার এলাকা আলোকিত করে তুলতে হতো নানা-নানুর ।

সেবার গ্রামে যাই কোরবানীর ঈদ করার জন্য। নানা , তার নাতি মেয়ে কে কাছে পেয়ে গরুর পাশাপাশি একটা ছাগল কোরবানী দিবে। ছাগল নিয়ে শুরু হল আমাদের নতুন গবেষনা , আমাদের না বলে বলা ঠিক হবে মামা দুজনের। তারা বিশ্বস্ত সুত্রে জানতে পেরেছেন পাশের গ্রামের এক লোক গত বছর একটা ছাগল কিনেছিল কোরবানী দেয়ার জন্য । কিন্তু ঠিক জবাই দেয়ার আগে সেটা বাঘ হয়ে পালিয়ে যায়। ছাগলটা নাকি কেনা হয়েছিল মোন্তা নামের এক জনের কাছ থেকে । মোন্তার ব্যবস্যাই নাকি এটা । আমাদের ছাগল যার কাছ থেকে কেনা হয়েছে তার নাম ও নাকি মোন্তা । 

সকালে ঘুম থেকে উঠে আমার গরুর কাছে যাবার পারমিশন থাকলেও তার মাথায় শিং এ স্পর্শ করার পারমিশন পেলেও , ছাগলের কাছে থেকে ২ মামা অন্তত ১০ হাত দূরে রাখে। শত হলেও বাঘের ধারে কাছে জেনেশুনে ভাগিনাকে যেতে দেয়া যায় না। যদি ছাগলটা বাঘ হয়েই যায় , তবে মামারাই তার সাথে লড়াই করবে । বাঘের সাথে লড়াই করার পদ্ধতিও খুব জটিল , দহিনবাড়ীর (দক্ষিন বাড়ী) কামাল দাদার কাছে থেকে বড় মামা শিখে এসছে । লাল মাটির ধুলার সাথে লবন আর তিব্বত পাউডার একটু মিশিয়ে একটা মিকচার বানাতে হয় যেটা ছাগল বাঘ হয়ে যাবার সময় গায়ে ছিটিয়ে দিলে ছিটিয়ে দেয়া অংশ আর বাঘ হতে পারে না । 
বড় মামা তার হ্যাফপেন্টের পকেটে বানিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছোট মামা এখনো লাল মাটি যোগার করতে পারেনি। লাল মাটি যোগার করতে হলে তাকে যেতে হবে মাঠ পেরিয়ে দুরের ঐ ইটের ভাটায়। তবে চাড়া খেলার ৩০০ টাকার ৬টা ‘ স্টার ফিল্টার ‘ এর কাগজ দিয়ে একটু খানি মিকচার যোগার করেছে বড় মামার কাছ থেকে । আমি ১০ হাত দূরে দারিয়ে চিন্তা করি যদি বাঘ হয়ে যায় ছাগলটা মামারা কি সময় মত মিকচার ছিটিয়ে দিতে পারবেতো !! কাছে যেতে পারি না কারন লড়াই এর সময় সাথে দুধভাত থাকা ঝামেলার ।

শিক্ষনীয় - ১: মামারা, দুধভাত ভাগিনারা টেনশনে আছে , ছাগলটা না আবার বাঘ হয়ে যায় ।
শিক্ষনীয় – ২ : মামাদের মিকচার শেষের দিকে।

Popular posts from this blog

সিরাজুল আলম খান - ব্ল্যাক সোয়ান

মুক্তিযুদ্ধ চলা কালে ট্রেনিং সেন্টারে (ফোল্ডার হাতে) পরিচিতি :  সিরাজুল আলম খান, নোয়াখালীতে ১৯৪১ সালে জন্ম নেয়া এক জন ব্যাক্তি যে বাংলাদেশের জন্মের সাথে জড়িত অত্যান্ত নিবিড় ভাবে। অবিবাহিত একজন মানুষ যাকে বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে সম্মক অবহিতজনের কাছে পরিচিত রহস্যপুরুষ হিসাবে, এছাড়া রাজনৈতিক নেতাদের কাছে তিনি পরিচিত তাত্ত্বিক (theorist) হিসাবে। সিরাজুল আলম খান ভিন্ন ভিন্ন তিন মেয়াদে প্রায় ৭ বছর কারাভোগ করেন। সিরাজুল আলম খান মেধাবী ছাত্র হিসাবে শিক্ষায়তনে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সিরাজুল আলম খানের বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী অঙ্ক শাস্ত্রে হলেও দীর্ঘ জেল জীবনে তিনি দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা, রাজনীতি-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজ বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, সামরিক বিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, সংগীত, খেলাধুলা সম্পর্কিত বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেন। ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপর গড়ে উঠে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য এবং দক্ষতা। সেই কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক নিযুক্ত হন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন রাজ্যের অসকস বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৬-’৯৭ সনে। নি

প্রাগৈতিহাসিক - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

সমস্ত বর্ষাকালটা ভিখু ভয়ানক কষ্ট পাইয়াছে। আষাঢ় মাসের প্রথমে বসন্তপুরের বৈকুণ্ঠ সাহার গদিতে ডাকাতি করিতে গিয়া তাহাদের দলকে - দল ধরা পড়িয়া যায়। এগারজনের মধ্যে কেবল ভিখুই কাঁধে একটা বর্শার খোঁচা খাইয়া পলাইতে পারিয়াছিল। রাতারাতি দশ মাইল দূরের মাথা - ভাঙা পুলটার নিচে পেঁৗছিয়া অর্ধেকটা শরীর কাদায় ডুবাইয়া শরবনের মধ্যে দিনের বেলাটা লুকাইয়া ছিল। রাত্রে আরো ন ক্রোশ পথ হাঁটিয়া একেবারে পেহলাদ বাগ্দীর বাড়ি চিতলপুরে। পেহলাদ তাহাকে আশ্রয় দেয় নাই। কাঁধটা দেখাইয়া বলিয়াছিল , ' ঘাওখান সহজ লয় স্যাঙ্গাত। উটি পাকব। গা ফুলব। জানাজানি হইয়া গেলে আমি কনে যামু ? খুনটো যদি না করতিস _' ' তরেই খুন করতে মন লইতেছে পেহলাদ। ' ' এই জনমে লা , স্যাঙ্গাত। ' বন কাছেই ছিল , মাইল পাঁচেক উত্তরে। ভিখু অগত্যা বনেই আশ্রয় লইল। পেহলাদ নিজে বাঁশ কাটিয়া বনের একটা দুর্গম অংশে সিনজুরি গাছের নিবিড় ঝোপের মধ্যে তাহাকে একটা মাচা বাঁধিয়া দিল। তালপাতা দিয়া একটা

বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা

১৯২৬ সালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একটি ভাষন দেন যার নাম “বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা” । এটি বাঙলা প্রাদেশিক সম্মেলনে প্রদান করেন। পরে তা হিন্দু সংঘ পত্রিকায় ছাপা হয় ১৯ শে আশ্বিন ১৯৩৩ সালে। জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক  এর ভাষায় ১৯৩০ সালের দিকে প্রকাশিত শরৎচন্দ্রের বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা পর এত ( আহামদ ছফার বাঙালি মুসলমানের মন ) প্রভোক্যাটিভ রচনা বাংলা ভাষায় পড়ি নাই। কোন একটা কথা বহু লোকে মিলিয়া বহু আস্ফালন করিয়া বলিতে থাকিলেই কেবল বলার জোরেই তাহা সত্য হইয়া উঠে না । অথচ এই সম্মিলিত প্রবল কন্ঠস্বরের একটা শক্তি আছে । এবং মোহও কম নাই । চারিদিক গমগম করিতে থাকে – এবং এই বাস্পাচ্ছন্ন আকাশের নীচে দুই কানের মধ্যে নিরন্তর যাহা প্রবেশ করে , মানুষ অভিভূতের মতো তাহাকেই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিয়া বসে । propaganda বস্তুত এই-ই । বিগত মহাযুদ্ধের দিনে পরস্পরের গলা কাটিয়া বেড়ানই যে মানুষের একমাত্র ধর্ম ও কর্তব্য , এই অসত্যকে সত্য বলিয়া যে দুই পক্ষের লোকেই মানিয়া লইয়াছিল , সে ত কেবল অনেক কলম এবং অনেক গলার সমবেত চীৎকারের ফলেই । যে দুই- একজন প্রতিবাদ করিতে গিয়াছিল , আসল কথা