Skip to main content

পরিপাকতন্ত্র সবসময় ফ্যাসিজমের ভক্ত




নতুন বৌ জামাইবাবুকে চমকে দেয়ার জন্য নিজ হাতে আজকে একটা স্পেশাল ডিস তৈরি করবে, গরুর মাংশের রেজালা। খেতে বসে মুখে দিয়ে জনাবের মনে হলো গ্রীষ্মের গরমে রাস্তার পিচ গলে আলাদা হয়ে গিয়েছিল তারই খানিক টা নিয়ে সোজা চালান করে দেয়া হয়েছেমাংশের বদলে ইটের খোয়া ঝোলের বদলে পিচ। কিন্তু ভালবাসা বলে কথা , সকল বিস্বাদ তুচ্ছ করে জনাব প্রেমে গদগদ হয়ে বৌকে বললেন, আরেকটু খানি পাতে তুলে দিতে। after all ভালবাসার কাছে সবই তুচ্ছ what counts is the gesture. অবশ্য পরিপাকতন্ত্র সবসময় ফ্যাসিজমের ভক্ত। 

পরদিন সকালে অফিস যাবার কালে জনাবের শরীর কেমন কেমন জানি করে । কাওরান বাজার এর কাছাকাছি হবার পর, পেটে ফ্যাসিস্ট গভরমেন্ট ক্ষমতা দখল করে। টয়লেট খোজার চিন্তা চালুর মাধ্যমে জারির করে একনায়কতন্ত্র
জনাবের দিকবিদিক শুন্য হবার কারনে ভুলে গেছেন এটা ঢাকা শহর । ‘অশিক্ষিত সিনেমার নায়িকার ঢাকা শহর এসে ফার্মগেটের ওভার ব্রিজের উপর গেয়েছিল ‘ ঢাকা শহর আইসা আমার আশা পুড়াইছেকিন্তু জনাবের আশা আজকের ঢাকা শহর পুড়াইতে পারবে না , গনতন্ত্রে প্রাকৃতিক কাজের বিবরন না থাকায় ঢাকা থেকে একে একে পাবলিক টয়লেট সব আজ রাজনৈতিক বন্দী বা ক্রসফায়ারের শিকার।

এদিকে সারা কাওরান বাজার আজ নতুন করে সমাজতন্ত্র চর্চায় ব্যাস্ত । সব গাড়ি লাইনে দাঁড়িয়ে আছে যেন রেশন থেকে চাল তুলতে হবে। ট্রাফিক কস্টেবল সকাল থেকে অর্কেষ্ট্রার কন্ডাক্টর হাতের জালি বেত তার ব্যাটন আর লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির সারি তার সদ্য স্নাতক শিক্ষার্থী। বাতাসে জালি বেত এর অসংকোচ চলাফেরা গভীর ভাবে লক্ষ্য করলে একটাই সুর মাথায় খেলে, বিটোফেন এর ফিফত্‌ সিম্ফোনী ট্রাফিক সার্জেন্ট ব্যস্ত একটু জিরিয়ে নিতে, ভোর থেকে স্যার কত কত ট্রাক এর পেছনে ছুটেছেন টাকার জন্য । সমাজতন্ত্র কায়েমের প্রথম কাজ হচ্ছে ধনীর কাছ থেকে ধন কেড়ে নেয়া , স্যার টাকা কেড়ে এনেছেন , এখন ক্লান্ত। সমাজতন্ত্রের নায়কেরা শুরুর পর থেকে সব সময় ক্লান্ত থাকে।  কিন্তু জনাবের কোন হুস নাই , ফ্যাসিস্ট তলপেট এখন নিরিবিলি তিনটা দেয়াল, একটা দরজা চায়।
জনাব ছুটলেন বিদ্যুৎ এর গতিতে। দেয়ালের খোজে ইংলিশে যাকে বলে start running like hell. অর্কেষ্টায় তখন বাজচ্ছে
চল চল চল
ঊর্দ্ধ গগনে বাজে মাদল
নিম্নে উতলা পেটের তল
অরুণ প্রাতের চাপের ফল
চলরে চলরে চল।।


Popular posts from this blog

সিরাজুল আলম খান - ব্ল্যাক সোয়ান

মুক্তিযুদ্ধ চলা কালে ট্রেনিং সেন্টারে (ফোল্ডার হাতে) পরিচিতি :  সিরাজুল আলম খান, নোয়াখালীতে ১৯৪১ সালে জন্ম নেয়া এক জন ব্যাক্তি যে বাংলাদেশের জন্মের সাথে জড়িত অত্যান্ত নিবিড় ভাবে। অবিবাহিত একজন মানুষ যাকে বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে সম্মক অবহিতজনের কাছে পরিচিত রহস্যপুরুষ হিসাবে, এছাড়া রাজনৈতিক নেতাদের কাছে তিনি পরিচিত তাত্ত্বিক (theorist) হিসাবে। সিরাজুল আলম খান ভিন্ন ভিন্ন তিন মেয়াদে প্রায় ৭ বছর কারাভোগ করেন। সিরাজুল আলম খান মেধাবী ছাত্র হিসাবে শিক্ষায়তনে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সিরাজুল আলম খানের বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী অঙ্ক শাস্ত্রে হলেও দীর্ঘ জেল জীবনে তিনি দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা, রাজনীতি-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজ বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, সামরিক বিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, সংগীত, খেলাধুলা সম্পর্কিত বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেন। ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপর গড়ে উঠে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য এবং দক্ষতা। সেই কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক নিযুক্ত হন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন রাজ্যের অসকস বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৬-’৯৭ সনে। নি

প্রাগৈতিহাসিক - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

সমস্ত বর্ষাকালটা ভিখু ভয়ানক কষ্ট পাইয়াছে। আষাঢ় মাসের প্রথমে বসন্তপুরের বৈকুণ্ঠ সাহার গদিতে ডাকাতি করিতে গিয়া তাহাদের দলকে - দল ধরা পড়িয়া যায়। এগারজনের মধ্যে কেবল ভিখুই কাঁধে একটা বর্শার খোঁচা খাইয়া পলাইতে পারিয়াছিল। রাতারাতি দশ মাইল দূরের মাথা - ভাঙা পুলটার নিচে পেঁৗছিয়া অর্ধেকটা শরীর কাদায় ডুবাইয়া শরবনের মধ্যে দিনের বেলাটা লুকাইয়া ছিল। রাত্রে আরো ন ক্রোশ পথ হাঁটিয়া একেবারে পেহলাদ বাগ্দীর বাড়ি চিতলপুরে। পেহলাদ তাহাকে আশ্রয় দেয় নাই। কাঁধটা দেখাইয়া বলিয়াছিল , ' ঘাওখান সহজ লয় স্যাঙ্গাত। উটি পাকব। গা ফুলব। জানাজানি হইয়া গেলে আমি কনে যামু ? খুনটো যদি না করতিস _' ' তরেই খুন করতে মন লইতেছে পেহলাদ। ' ' এই জনমে লা , স্যাঙ্গাত। ' বন কাছেই ছিল , মাইল পাঁচেক উত্তরে। ভিখু অগত্যা বনেই আশ্রয় লইল। পেহলাদ নিজে বাঁশ কাটিয়া বনের একটা দুর্গম অংশে সিনজুরি গাছের নিবিড় ঝোপের মধ্যে তাহাকে একটা মাচা বাঁধিয়া দিল। তালপাতা দিয়া একটা

বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা

১৯২৬ সালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একটি ভাষন দেন যার নাম “বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা” । এটি বাঙলা প্রাদেশিক সম্মেলনে প্রদান করেন। পরে তা হিন্দু সংঘ পত্রিকায় ছাপা হয় ১৯ শে আশ্বিন ১৯৩৩ সালে। জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক  এর ভাষায় ১৯৩০ সালের দিকে প্রকাশিত শরৎচন্দ্রের বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা পর এত ( আহামদ ছফার বাঙালি মুসলমানের মন ) প্রভোক্যাটিভ রচনা বাংলা ভাষায় পড়ি নাই। কোন একটা কথা বহু লোকে মিলিয়া বহু আস্ফালন করিয়া বলিতে থাকিলেই কেবল বলার জোরেই তাহা সত্য হইয়া উঠে না । অথচ এই সম্মিলিত প্রবল কন্ঠস্বরের একটা শক্তি আছে । এবং মোহও কম নাই । চারিদিক গমগম করিতে থাকে – এবং এই বাস্পাচ্ছন্ন আকাশের নীচে দুই কানের মধ্যে নিরন্তর যাহা প্রবেশ করে , মানুষ অভিভূতের মতো তাহাকেই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিয়া বসে । propaganda বস্তুত এই-ই । বিগত মহাযুদ্ধের দিনে পরস্পরের গলা কাটিয়া বেড়ানই যে মানুষের একমাত্র ধর্ম ও কর্তব্য , এই অসত্যকে সত্য বলিয়া যে দুই পক্ষের লোকেই মানিয়া লইয়াছিল , সে ত কেবল অনেক কলম এবং অনেক গলার সমবেত চীৎকারের ফলেই । যে দুই- একজন প্রতিবাদ করিতে গিয়াছিল , আসল কথা