Skip to main content

কাজের বুয়া ও কবি



তখন সবে ভার্সিটির প্রথম বর্ষের ছাত্র। মুগ্ধ হবার সহজাত ক্ষমতার প্রবল দাপটে অসহায় । একটা একটা কবিতা লেখে আল শাহারিয়ার আর মুগ্ধ হয়ে নিজের লেখার পড়ে । মনের কোনে আশা জাগে কোন একদিন হয়তো তার কবিতাও ছাপা হবে কোন পত্রিকায় । গ্রামের বয়জোষ্ঠ্য তবারক দাদার বাড়িতে লাইব্রেরি থাকায় গ্রামে গেলে প্রায়ই শাহারিয়ারকে তবারক দাদার বাড়িতে যেতে হয় । অবশ্য অন্য কারন ও আছে । তবারক দাদার নাতনি সুরাইয়া এখন কলেজে পড়ে । মেয়েটা দেখতে খুব সুন্দর ।

শুক্রবারদিন সকাল সকাল তবারক দাদার বাড়িতে গেলে এক জন অচেনা লোকের উপস্থিতি চোখে পড়ে শাহারিয়ার এর । তবারক দাদাকে দোস্ত দোস্ত করেছে তবারক দাদার অর্ধেক বয়েসি এক ব্যাক্তি। তবারক দাদা শাহারিয়ার কে দেখে বলেন আয় , অচেনা সে ব্যাক্তির দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলেন ‘ এই হচ্ছে এই এলাকার তরুন সাহিত্যিক। বলেই হা হা হা করে হেসে ফেলেন । শাহারিয়ার গুটিয়ে যায়, তাকি লজ্জায় না অভিমানে বোঝা যায় না । তবারক দাদা পরিচয় করিয়ে দেয় সে অচেনা ব্যক্তির সাথে । তাঁর নাম আল মুজাদ্দেদ, কবি ও সাংবাদিক । এক পত্রিকার সাহিত্যপাতার এডিটর । তরুন সাহিত্যিক বলে পরিচয় দেয়াতে একটা কাজ অবশ্য হয় , মুজাদ্দেদ সাহেব জিজ্ঞাসা করেন কার কার লেখা পড়েছে, কার লেখা ভাল লাগে, কি ধরনের লেখা ভাল লাগে । হয়তো নিজের লেখা কোন ভাবে ছাপানো যেতে পারে ভেবে কিছুটা নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হবার ইচ্ছায় শাহারিয়ার দ্বিগুন উৎসাহে মুজাদ্দেদ সাহেবের সাথে গল্পে মেতে উঠে। মুজাদ্দেদ সাহেব বলেন আমি বন্ধু একটু ঘুরে আসি , অনেক দিন পর গ্রামের দেখা পেলাম। তবারক দাদা শাহারিয়ার কে বলেন তুই থাক মুজাদ্দেদ এর সাথে, আমি গিয়া একটু ধানগুলার তদারক করে আসি।

মুজাদ্দেদ সাহেব শাহারিয়ার কে নিয়ে বের হয়ে নদীর দিকে যেতে শুরু করেন । তবারক দাদার বাড়ি থেকেই সোজা ক্ষেতের আল ধরে আগালেই নদী । যাবার পথে কবি হবে গেলে কি কি লাগে কি কি পড়তে হয় , কি কি শিখতে হয় ইত্যকার বিষয়ে মুজাদ্দেদ সাহেব বক্তৃতা দিচ্ছিলেন , আর মনোযোগী শ্রোতার মত শুনে যাচ্ছিল শাহারিয়ার। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস যে এত বড় এত সমৃদ্ধ তা হয়তো মুজাদ্দেদ সাহেবের সাথে পরিচয় না হলে জানাই হতো না শাহারিয়ারের । কত কত লেখক কবির কথা কবিতার কথা উপন্যাসের কথা, গল্পের কথা, তাদের ধরন, গতি প্রকৃতি। এক জন ঋদ্ধ বিদগ্ধ পাঠকই হবে পারে এক জন লেখক, কি অসাধারন কথা ।

নদীর ধারে গিয়ে মুজাদ্দেদ সাহেব কিছুক্ষন শোনালেন আরবি ফার্সি সাহিত্যের কি প্রভাব বাংলা সাহিত্যের উপর । এ সময় এলো ফোন , ফোনের স্কীনে নাম্বারটা দেখেই মুজাদ্দেদ সাহেব কেমন যেন তথস্থ হয়ে গেলেন । হ্যালো বলতেই ও পাশ থেকে এক মহিলা বলে উঠলো “তুমি যে সকালে বের হলে , বাজার টা কে করবে শুনি ?” মুজাদ্দেদ সাহেব নকিয়া ফোন ইউজ করেন , নকিয়ার এই এক সমস্যা । কলারের কন্ঠ একটু নির্জন হলেই মোটামটি শোনা যায়। মুজাদ্দেদ সাহেব কেমন অসহায় বোধ করছেন । বললেন ‘আরে শোন শোন , আমি গ্রামে আসছি কাজের লোকের সন্ধানে, তোমার কাজ কর্মে অসুবিধা হয় । কাজের লোক ছাড়া চলা যায় নাকি ঢাকায় ।’ ওপাশ থেকে ‘আহাহা , মিথ্যা কথা বলায় আর জায়গা পাওনা !!! আমি তোমাকে হাড়ে হাড়ে চিনি । ’ মুজাদ্দেদ সাহেব বেশ বিব্রত হয়ে একটু দূরে গেলেন বাকি কথা বলার জন্য ।

এদিকে শাহারিয়ার স্বপ্নে বিভোর , কবিতার বই , উপন্যাস , মেলার স্টলে বসে অটোগ্রাফ, ছবি, স্বাক্ষাতকার , পুরস্কার । আহ্‌ । খালি শ দুয়েক বই পড়লেই ঋদ্ধ বিদগ্ধ পাঠক থেকে এক জন লেখক । মুজাদ্দেদ সাহেব ফিরে এসে চিন্তিত চেহারায় কিছুটা কাচুমাচু ভঙ্গিতে বললেন “আচ্ছা ‘ ছোট কবি ’ তুমি আমার একটা সাহায্য করতে পারো?” ছোট কবি ............!!! শাহারিয়ারের স্বপ্নে যেন কেউ এসে মালির মতো যত্ন করে গাছ পালা গুলোকে সবল সতেজ করে দিয়ে গেল । এক জন শিল্পি এসে যেন সব তুলির আচরে হাজারো রঙ্গে রঙ্গিন করে দিয়ে গেল । জয়নুলের মত কাট কয়লার ছবি না, সুলতানের মতো বড় ক্যানভাসের হাজারটা রঙের ছবি । গাছে, মাটিতে, পানিতে, ঘরের সামনের শিম গাছে , বাড়ির পাশের ধান ক্ষেতে, রহমান মিয়ার চায়ের দোকানে , মায় নতুন বিয়ানো সাদা বাছুরটাকেও বেগুনী করে দিল ।

বিনয়ে গদগদ হয়ে শাহারিয়ার বললো ছি ছি আমার কাছে আপনি এমন ভাবে বলছেন কেন “সাহায্য!!!”, আপনি আমার বড় , আমাদের এলাকার গর্ব, একজন কবি । আপনার সাহায্য করা আমার জন্য কর্তব্য। স্মিত হেসে মুজাদ্দেদ সাহেব বললেন ‘এই না হলে কবি , এক কবিই বোঝে আরেক কবির মনে কথা । বুজলে ; বাসার কাজের লোক নিয়ে গিয়ে রাখা যায় না। কদিন যেতে না যেতেই দেখা যায় সব ফুস। বাসায় গত দের মাস ধরে কোন কাজের লোক নাই । বৌটা আমার একা কাজ করে করে হয়রান । একটা কাজের লোক থাকলে তার একটু সহায়তা হয় । তুমি কি পারবে একটা কাজের লোক যোগার করে দিতে । দুটা হলে ভাল হয় ।’

শাহারিয়ারের স্বপ্নে তখনো শিল্পি বাছুরের ল্যাজের শেষ আচরটুকু দিচ্ছে। বিনয়ের অবতার শাহারিয়ার বললো ‘আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো আমাকে এক সপ্তাহ সময় দেন, আমি যোগার করে ঢাকায় নিয়ে যাবো ।’ মুজাদ্দেদ সাহেব স্মিত হেসে বললেন; এতো তারাতারির কিছু নাই , তুমি সময় নিয়ে খুজে দিও । আর সাথে তোমার ভাল লেখা পাচ সাতটা নিয়ে যেও। আমি ছাপিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করবো। শাহারিয়ার এর আনন্দে চেহারায় উচ্ছ্বাসের বন্যা শুরু হলো। আর কিছু দিন পরেই তার লেখা পত্রিকায় ছাপা হবে, কত লোক পড়বে ।

পরদিন কলেজ কামাই দিয়ে হাবিব ভাইয়ের মোটরসাইকেল নিয়ে বাজারে গেল শাহারিয়ার । ৪ লিটার তেল ভরে রওনা দিল কাজের লোকের খোজে । প্রথমেই গেল তার বোনের বাড়িতে । ভেবেছিল খুব সহজের পাওয়া যাবে আপার কাছে। জানাশোনার ভিতরে লোক নিলে নিরাপত্তার দিকটাও নিশ্চিত থাকা যায়। বোনের কাছে কাজের লোকের কথা তুলতেই বোন তার বলে উঠলো হায়রে আমার ভাই !! কোন দুনিয়াতে আছো ?? কাজের লোক পাওয়া কি মুখের কথা !! এখন কি কাজের অভাব আছে গরিবের । হাটা শিখতে পারলেই যায় ঢাকায় গারমেন্স এর কাজ করতে । গ্রামে আইলে যদি জিগাই কি করস , কয় চাকরি করি । এতো সোজা না ...আমি নিজে গত আড়াই মাস ধইরা কাজের লোক খুজি । পাইনা আর তুমি আইছো কাজের লোকের সন্ধানে । কাজের লোকের এমন আকাল থাকতে পারে তা শাহারিয়ারের ধারনাতে ছিল না । যা হোক আশে পাশের গ্রামেও খোজ নিতে হবে । বোনের বাড়ি থেকে বের হয়ে খোজা শুরু করলো প্রতিটা বাড়িতে, যেগুলো দেখে মনে হয় গরিব ঘর , সেখানেই খোজার চিন্তা করে এক বাড়িতে গেল খোজ নিতে। বাড়ির কর্তা হইতো আরেকটু হলে স্যান্ডেল ছুড়ে মারতো । যাহোক সে বিষয়ে আর না যাই।

এক সপ্তাহ হন্যে হয়ে খুজে শেষে বাড়ির উত্তর দিকে ৩ মাইল দুরের সৈয়দপুর গ্রামের এক বর্গা চাষীর ৮ বছর বয়েসী এক মেয়েকে পাওয়া যায় । তার বাবা বললো কাজকর্ম একটু আকটু জানে সে। তাকে সকাল ১০টার দিকে নিয়ে আসে নিজের বাড়িতে, দুপুরে রওনা দিবে ঢাকার উদ্দেশ্যে। নিজে গোসল করে , খাওয়া দাওয়া করে, বসে যায় তার কবিতা গুলো ফ্রেস করে লেখার জন্য। এক কদিনের দৌড়াদৌড়িতে , লেখা আর ফ্রেস করা হয় নি । মেয়েটাকে ভাত খেতে দিয়ে তদারকি করছে শাহারিয়ারের মা। বাংলা ঘরের চেয়ারে বসে যখন ফ্রেস করে লিখছিল সে সময় দেখে দূর থেকে এক মহিলা প্রায় পাগলের মত দৌরে ক্ষেতের মাঝ দিয়ে আসছে । কাছাকাছি হবার পর দেখে মনে হচ্ছিল মেয়েটির মা। আরো কাছে হবার পর বুঝতে পারে সে মেয়েটির মা। মহিলা শাহারিয়ার কে দেখেই বলে আমার মেয়ে কই, আমার মেয়ে কই??? শাহারিয়ার কিছুটা বোকা হয়ে যায় । ঐ অবস্থাতেই বলে ভাত খায়। মহিলা কথা বলার সুযোগ না দিয়ে দৌড়ে অন্দর মহলে চলে যায়। শাহারিয়ার ধাতস্থ হয়ে বাড়ির ভেতরে যায় । মেয়েকে জড়িয়ে ধরে মা হাউ মাউ করে কাদছে আর বলছে । আমি তোরে বিক্রি করি নাইরে মা আমি তোরে বিক্রি করি নাই।

মেয়েটার মায়ের কথা কিছুই বুঝতে পারলো না শাহারিয়ার কিংবা তার মা-বোন। শাহারিয়ার বললো ‘কি হইছে আপনার এই ভাবে দৌড়াইয়া আসলেন যে। ’ মহিলা হাউমাউ করে কেদে কেদে যা বললো তার সারমর্ম হচ্ছে শাহারিয়ার নাকি মেয়েটাকে নিয়ে আসছে বিক্রি করে দেবার জন্য , ঢাকার বাসায় কাজের কথা সব মিথ্যা ‘আমি আমার মাইয়ারে বিক্কিরি করুম না , আমার মাইয়ার কামের দরকার নাই । রসু মিয়া কইছে ঢাকায় কামের কথা কইয়া লুক জন ছোট মাইয়া নিয়া বেইচা দেয় ডাক্তারগো কাছে । তারায় চক্ষু, কলিজা, আত কাইটা বিক্কিরি কইয়া দেয় ।’ সে সময় কেন জানি মেয়েটাও ও মাগো; ও মাগো; ও আল্লাগো বলে কান্না শুরু করে দেয়। এতোক্ষন তো ভালই ছিল !!! মহিলার কথা শুনে শাহারিয়ার এর মা কটমট করে তার ছেলের দিকে তাকালে , শাহারিয়ার সুবোধ ছেলের মতো বলে ঠিক আছে, আপনের তো বিশ্বাস হয় নাই, আপনে আপনের মেয়েরে নিয়া যায় । যদিও বলার সময় চোখের সমনে ভাসছিল বাছুরটা , বাছুরের গায়ে সব রঙ কই যেন উধাও হয়ে গেল, বাছুরটা সাদা হয়ে গেল।

মেয়েটাকে ফিরিয়ে দিয়ে কি করবে চিন্তা করতে করতে শাহারিয়ার ভাবলো , চেষ্টাতো কম হয়নি । এখন আর কি করার আছে, এক সপ্তাহ ধরে তো আর কম জায়গাতে গেলাম না। একটা যাও লোক জুটলো , একেবারে শেষ মুহুর্তে এসে আর হলো না। ঢাকায় গিয়ে মুজাদ্দেদ সাহাবের সাথে দেখা করে ঘটনা বলি আর কবিতা গুলো দিয়ে আসি । বাসে ওঠার আগে বাজারের দোকান থেকে ১০ টাকা মিনিটে ফোন দিয়ে মুজাদ্দেদ সাহেবকে ফোন দিলে প্রথমে চিনতে পারেনি । পরিচয় ভাল করে দেয়াতে যখন চিনতে পারলো, প্রথম কথায় জিজ্ঞাসা করলো কাজের লোক জোগার করতে পেরেছে ?? শাহারিয়ার এক দম চুপশে যায় । তার মনে হচ্ছিল ক্ষেতের সেচ দেয়ার মেশিন দিয়ে তার ভেতর থেকে সব কেউ যেন বের করে নিয়ে যাচ্ছে । মিনমিনে গলায় শাহারিয়ার বলে, ‘ না মানে, আমি গত সাত দিন ধরে আসে পাশের ১৫-২০ টা গ্রাম তন্ন তন্ন করে একটা মেয়ে যোগার করছিলাম , কিন্তু মেয়ের মাকে কে যেন বললো যে আমি নাকি তাকে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিবো , আর তাতেই সে মহিলা বাড়ি থেকে দৌরে আমার বাড়ি এসে মেয়েকে নিয়ে যায়। ‘ একথা গুলো এক নিশ্বাসে বলে শাহারিয়ার একদম স্তব্ধ হয়ে যায় , কান পাতলে তার হৃদপিন্ডের ডিপ ডিপ শব্দ হতো শোনা যেতো , তবে দোকানদার লাউ এর দামাদামি করছিল বলে এদিকে মনোযোগ দিতে পারে নি । শাহারিয়ারের কথা শুনে মুজাদ্দেদ সাহেব বেশ জোরের সাথেই বললেন “ বুজছি !! করছো আমার বালডা । ”

১০ বছর পরে

শাহারিয়ার এখন র‍্যাবে কাজ করে । তার আর ভার্সিটি পড়া হয়নি, আইএসএসবি দিয়ে চলে আসে আর্মিতে । সবে মেজর হয়েছে সে । ভার্সিটি পড়ার সময়কার এক ক্লাসমেট আরাফাত এর সাথে দেখা নিউ-মার্কেটে । আরাফাত এখন গারমেন্স এর বিজনেস আছে, ভাল কবিতা লিখতো সে । অনেক দিন পরে দেখার হওয়ায় খাবারের দোকানে বসে ফুচকা কোকের অর্ডার দিয়ে গল্পে মেতে উঠলো দুজনে । আরাফাত এখনো গল্প কবিতা লেখে , মাঝে মাঝে ছাপা হয় পত্রিকায় । বই বের করার সময় আর হয়ে উঠে না তার। তোমার কি অবস্থা জিজ্ঞাসা করার পর শাহারিয়ার হেসে বলে “দুইটা কাজের লোক যোগার করতে পারি নাই তাই কবি হইতে পারলাম না । ”




Popular posts from this blog

সিরাজুল আলম খান - ব্ল্যাক সোয়ান

মুক্তিযুদ্ধ চলা কালে ট্রেনিং সেন্টারে (ফোল্ডার হাতে) পরিচিতি :  সিরাজুল আলম খান, নোয়াখালীতে ১৯৪১ সালে জন্ম নেয়া এক জন ব্যাক্তি যে বাংলাদেশের জন্মের সাথে জড়িত অত্যান্ত নিবিড় ভাবে। অবিবাহিত একজন মানুষ যাকে বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে সম্মক অবহিতজনের কাছে পরিচিত রহস্যপুরুষ হিসাবে, এছাড়া রাজনৈতিক নেতাদের কাছে তিনি পরিচিত তাত্ত্বিক (theorist) হিসাবে। সিরাজুল আলম খান ভিন্ন ভিন্ন তিন মেয়াদে প্রায় ৭ বছর কারাভোগ করেন। সিরাজুল আলম খান মেধাবী ছাত্র হিসাবে শিক্ষায়তনে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সিরাজুল আলম খানের বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী অঙ্ক শাস্ত্রে হলেও দীর্ঘ জেল জীবনে তিনি দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা, রাজনীতি-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজ বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, সামরিক বিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, সংগীত, খেলাধুলা সম্পর্কিত বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেন। ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপর গড়ে উঠে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য এবং দক্ষতা। সেই কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক নিযুক্ত হন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন রাজ্যের অসকস বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৬-’৯৭ সনে। নি

প্রাগৈতিহাসিক - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

সমস্ত বর্ষাকালটা ভিখু ভয়ানক কষ্ট পাইয়াছে। আষাঢ় মাসের প্রথমে বসন্তপুরের বৈকুণ্ঠ সাহার গদিতে ডাকাতি করিতে গিয়া তাহাদের দলকে - দল ধরা পড়িয়া যায়। এগারজনের মধ্যে কেবল ভিখুই কাঁধে একটা বর্শার খোঁচা খাইয়া পলাইতে পারিয়াছিল। রাতারাতি দশ মাইল দূরের মাথা - ভাঙা পুলটার নিচে পেঁৗছিয়া অর্ধেকটা শরীর কাদায় ডুবাইয়া শরবনের মধ্যে দিনের বেলাটা লুকাইয়া ছিল। রাত্রে আরো ন ক্রোশ পথ হাঁটিয়া একেবারে পেহলাদ বাগ্দীর বাড়ি চিতলপুরে। পেহলাদ তাহাকে আশ্রয় দেয় নাই। কাঁধটা দেখাইয়া বলিয়াছিল , ' ঘাওখান সহজ লয় স্যাঙ্গাত। উটি পাকব। গা ফুলব। জানাজানি হইয়া গেলে আমি কনে যামু ? খুনটো যদি না করতিস _' ' তরেই খুন করতে মন লইতেছে পেহলাদ। ' ' এই জনমে লা , স্যাঙ্গাত। ' বন কাছেই ছিল , মাইল পাঁচেক উত্তরে। ভিখু অগত্যা বনেই আশ্রয় লইল। পেহলাদ নিজে বাঁশ কাটিয়া বনের একটা দুর্গম অংশে সিনজুরি গাছের নিবিড় ঝোপের মধ্যে তাহাকে একটা মাচা বাঁধিয়া দিল। তালপাতা দিয়া একটা

বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা

১৯২৬ সালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একটি ভাষন দেন যার নাম “বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা” । এটি বাঙলা প্রাদেশিক সম্মেলনে প্রদান করেন। পরে তা হিন্দু সংঘ পত্রিকায় ছাপা হয় ১৯ শে আশ্বিন ১৯৩৩ সালে। জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক  এর ভাষায় ১৯৩০ সালের দিকে প্রকাশিত শরৎচন্দ্রের বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা পর এত ( আহামদ ছফার বাঙালি মুসলমানের মন ) প্রভোক্যাটিভ রচনা বাংলা ভাষায় পড়ি নাই। কোন একটা কথা বহু লোকে মিলিয়া বহু আস্ফালন করিয়া বলিতে থাকিলেই কেবল বলার জোরেই তাহা সত্য হইয়া উঠে না । অথচ এই সম্মিলিত প্রবল কন্ঠস্বরের একটা শক্তি আছে । এবং মোহও কম নাই । চারিদিক গমগম করিতে থাকে – এবং এই বাস্পাচ্ছন্ন আকাশের নীচে দুই কানের মধ্যে নিরন্তর যাহা প্রবেশ করে , মানুষ অভিভূতের মতো তাহাকেই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিয়া বসে । propaganda বস্তুত এই-ই । বিগত মহাযুদ্ধের দিনে পরস্পরের গলা কাটিয়া বেড়ানই যে মানুষের একমাত্র ধর্ম ও কর্তব্য , এই অসত্যকে সত্য বলিয়া যে দুই পক্ষের লোকেই মানিয়া লইয়াছিল , সে ত কেবল অনেক কলম এবং অনেক গলার সমবেত চীৎকারের ফলেই । যে দুই- একজন প্রতিবাদ করিতে গিয়াছিল , আসল কথা