Skip to main content

পৌনে এগার

২০০২ সালের ঘটনা , আমি আর বন্ধু মঞ্জু তিতুমীর কলেজের ক্যান্টিন থেকে চা খেয়ে সবে বসি শহীদ মিনারের সিড়িতে । এক সিনিওর আপু ছিল যাকে আমি নাম দিয়েছিলাম পুতলা । দেখতে ছোটখাটো গোলা চেহারায় গোল চশমা । কবি নজরুলের মত চুল, আমাদের থেকে চার পাচ হাত দূরে বসেছিলেন । আমার বা দিকে আপু ডানপাশে মঞ্জু।

আমার দিকে তাকিয়া কিছু একটা জিজ্ঞাসা করলেন। আমি একটু কিংকর্তব্যবিমূর হয়ে যাই, সে সময় মেয়েদের সাথে কথা বলতে গেলে গলা শুকান

ো মাথা ফাকা ফাকা লাগার মতো সমস্যা হতো । আবার কিছু একটা জানতে চাচ্ছেন । আমি উত্তর দেই আমরা ভাল আছি , আপনি কেমন আছেন। মঞ্জু গর্তজীবি প্রানী , সাধারনত কচ্ছপ এর মত মাথাটা সামনের দিকে এগিয়ে দিয়ে হাত নেড়ে নেড়ে বলল হ্য হ্য আপু আমরা ভাল আছি । আপনে কেমন আছেন।

এবার আপু আঙ্গুল দিয়ে বা হাতের কব্জিতে ইশারা করে জিজ্ঞাসা করলেন কটা বাজে । বুজলাম বেকুব তো হইছি সিরিয়াসলি। আমি তারাতারি ঘড়ি দেখে টাইম বললাম , টাইম শুনে মঞ্জুর রিএকশন ছিল "তুই টাইম কস কে , জিগাইছে কেমন আছছ।" আমি তার দিকে তাকাইয়ে বললাম শালা জিগাইছিল কয়টা বাজে , আমি ভুল ইন্টারপ্রেট করছি । হঠাৎ আমার বা হাত নিজের দিকে টেনে নিয়ে সময় দেখলো মঞ্জু , আপুর দিকে আবার কচ্ছপের মত মাথা এগিয়ে দিয়ে বেশ জোরে জোরে সময় বললো ।

সময় বলেই আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো "আয় হায় এইটা কি হইলো !!" তারপর হাসতে হাসতে শহীদ মিনারের বেদিতে শুয়ে পরে এমন গড়াগড়ি দিলে যে , আপু তো আপু অন্যান্য যত কাপল, ছেলে, মেয়ে ছিল সব বেদি থেকে সরে গেল, সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মঞ্জুর দিকে । মঞ্জু গড়াগড়ি দিচ্ছে আর বলছে পৌনে এগার হা হা হা হা পৌনে এগার, আর আমি মঞ্জুর এক হাত ধরে টেনে তোলার চেষ্টা করছি ।

Popular posts from this blog

সিরাজুল আলম খান - ব্ল্যাক সোয়ান

মুক্তিযুদ্ধ চলা কালে ট্রেনিং সেন্টারে (ফোল্ডার হাতে) পরিচিতি :  সিরাজুল আলম খান, নোয়াখালীতে ১৯৪১ সালে জন্ম নেয়া এক জন ব্যাক্তি যে বাংলাদেশের জন্মের সাথে জড়িত অত্যান্ত নিবিড় ভাবে। অবিবাহিত একজন মানুষ যাকে বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে সম্মক অবহিতজনের কাছে পরিচিত রহস্যপুরুষ হিসাবে, এছাড়া রাজনৈতিক নেতাদের কাছে তিনি পরিচিত তাত্ত্বিক (theorist) হিসাবে। সিরাজুল আলম খান ভিন্ন ভিন্ন তিন মেয়াদে প্রায় ৭ বছর কারাভোগ করেন। সিরাজুল আলম খান মেধাবী ছাত্র হিসাবে শিক্ষায়তনে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সিরাজুল আলম খানের বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী অঙ্ক শাস্ত্রে হলেও দীর্ঘ জেল জীবনে তিনি দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা, রাজনীতি-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজ বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, সামরিক বিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, সংগীত, খেলাধুলা সম্পর্কিত বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেন। ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপর গড়ে উঠে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য এবং দক্ষতা। সেই কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক নিযুক্ত হন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন রাজ্যের অসকস বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৬-’৯৭ সনে। নি

প্রাগৈতিহাসিক - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

সমস্ত বর্ষাকালটা ভিখু ভয়ানক কষ্ট পাইয়াছে। আষাঢ় মাসের প্রথমে বসন্তপুরের বৈকুণ্ঠ সাহার গদিতে ডাকাতি করিতে গিয়া তাহাদের দলকে - দল ধরা পড়িয়া যায়। এগারজনের মধ্যে কেবল ভিখুই কাঁধে একটা বর্শার খোঁচা খাইয়া পলাইতে পারিয়াছিল। রাতারাতি দশ মাইল দূরের মাথা - ভাঙা পুলটার নিচে পেঁৗছিয়া অর্ধেকটা শরীর কাদায় ডুবাইয়া শরবনের মধ্যে দিনের বেলাটা লুকাইয়া ছিল। রাত্রে আরো ন ক্রোশ পথ হাঁটিয়া একেবারে পেহলাদ বাগ্দীর বাড়ি চিতলপুরে। পেহলাদ তাহাকে আশ্রয় দেয় নাই। কাঁধটা দেখাইয়া বলিয়াছিল , ' ঘাওখান সহজ লয় স্যাঙ্গাত। উটি পাকব। গা ফুলব। জানাজানি হইয়া গেলে আমি কনে যামু ? খুনটো যদি না করতিস _' ' তরেই খুন করতে মন লইতেছে পেহলাদ। ' ' এই জনমে লা , স্যাঙ্গাত। ' বন কাছেই ছিল , মাইল পাঁচেক উত্তরে। ভিখু অগত্যা বনেই আশ্রয় লইল। পেহলাদ নিজে বাঁশ কাটিয়া বনের একটা দুর্গম অংশে সিনজুরি গাছের নিবিড় ঝোপের মধ্যে তাহাকে একটা মাচা বাঁধিয়া দিল। তালপাতা দিয়া একটা

বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা

১৯২৬ সালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একটি ভাষন দেন যার নাম “বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা” । এটি বাঙলা প্রাদেশিক সম্মেলনে প্রদান করেন। পরে তা হিন্দু সংঘ পত্রিকায় ছাপা হয় ১৯ শে আশ্বিন ১৯৩৩ সালে। জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক  এর ভাষায় ১৯৩০ সালের দিকে প্রকাশিত শরৎচন্দ্রের বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা পর এত ( আহামদ ছফার বাঙালি মুসলমানের মন ) প্রভোক্যাটিভ রচনা বাংলা ভাষায় পড়ি নাই। কোন একটা কথা বহু লোকে মিলিয়া বহু আস্ফালন করিয়া বলিতে থাকিলেই কেবল বলার জোরেই তাহা সত্য হইয়া উঠে না । অথচ এই সম্মিলিত প্রবল কন্ঠস্বরের একটা শক্তি আছে । এবং মোহও কম নাই । চারিদিক গমগম করিতে থাকে – এবং এই বাস্পাচ্ছন্ন আকাশের নীচে দুই কানের মধ্যে নিরন্তর যাহা প্রবেশ করে , মানুষ অভিভূতের মতো তাহাকেই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিয়া বসে । propaganda বস্তুত এই-ই । বিগত মহাযুদ্ধের দিনে পরস্পরের গলা কাটিয়া বেড়ানই যে মানুষের একমাত্র ধর্ম ও কর্তব্য , এই অসত্যকে সত্য বলিয়া যে দুই পক্ষের লোকেই মানিয়া লইয়াছিল , সে ত কেবল অনেক কলম এবং অনেক গলার সমবেত চীৎকারের ফলেই । যে দুই- একজন প্রতিবাদ করিতে গিয়াছিল , আসল কথা