Skip to main content

ইলেকশন

ব্রহ্মাদেব, একুনে ৩০০০ বছর হতে চললো দেবালোকে রাজত্ব করিতেছেন , গতবার ইলেকশনে অপোনেন্ট পার্টি ছিল বিষ্ণু। সকল দেবতাই তাহাকে ভোট দিয়াছিল , খালি নারদ ব্যাটা ভোট না দিয়া চলিয়া গিয়াছিল, বলিয়াছিল তাহার নাকি পেটের ব্যাথ্যা , বাড়ি যাইয়া দই চিড়া খাইয়া শুইয়া থাকিবে । কিন্তু ব্যাটা বদের হাড়ি সোজা গিয়া শিবের পুত্র কার্তিকের সাথে গিয়া শলা করিতেছিল। এমনিতেই সে শিবের পুত্র তায় আবার সকল ব্রহ্মাস্ত্রের রক্ষনাবেক্ষনের ভার তার হাতে, ছেলেটি অল্পতেই চটিয়া যায়। ব্রহ্মাদেব ঘটনা শুনিয়া ভকরাইয়া গিয়াছিলেন , তবে ভাগ্যভাল যে সে সময় চলিতেছিল অমাবশ্যার তিথি তাই কার্তিক আর কিছু করিতে পারে নাই, না হইলে কি করিত কে জানে । 

নারদের এহেন কাজের জন্য ইলেকশনে জিতিয়াই ব্রহ্মাদের নারদকে ওএসডি করেন ২০০০ বছর। ওএসডি থাকিবার পরে যখন ব্যাট্যা টিকিতে না পারিয়া ব্রহ্মার নিকট ক্ষমা চাহিয়া ওএসডি তুলিয়া লইবার জন্য দেনদরবার করে তখন ৫ পেটিতে রফা হয়। , ব্যাটা হতচ্ছাড়া !!! ব্রহ্মার সাথে লাগিতে আসে , কত্ত বড় সাহস !! নির্বাচনের সময় কাছাইয়া আসাতে ব্রহ্মা কিঞ্চিত চিন্তিত , ইদানিং নাকি বিষ্ণু আর শিব মিলিয়া গোপন শলা করিতেছে কেপ্টেন্স ওয়ার্ল্ডস এ গিয়া, নারদ ব্যাটাই খবর খানা দিল । কি শলা চলিতেছে তা এখনো উদ্ধার করা হয়নাই । উর্বশীকে পাঠাইতে হবে সন্দেশ লইবার জন্য, কি চলিতেছে ঐ শিবিরে। 

শিব : বিষ্ণুদেব এইবার নির্বাচনে কিন্তু আমাকে সাপোর্ট দিতে হইবে । গত বার হারিয়া গিয়া কেলেংকারী হইয়া গিয়াছিল । 

বিষ্ণু : হ্যা ভ্রাতা, ব্রহ্মাদেব তার সকল শক্তি দেবতাদের উপর প্রয়োগ করেন বলিয়া আমাদের বার বার ইলেকশনে হারিয়া যাইতে হয়। 

শিব : ভাবিতেছি এইবার মত্তলোক হইতে কিছু আইডিয়া আনায়ন করিব ইলেকশনের প্রচারের জন্য। 

বিষ্ণু : সে কি বোলছো ভায়া !! এমন করলে তো স্বর্গোলোকের উপর থেকে মত্যলোকের ভয় সম্মান সব কমিয়া যাইবে !! 

শিব : সে নিয়া ভেবে কি হবে বিষ্ণুদা ! যা যাবার তাতো গেছে অনেক আগেই । মত্তলোকে এখন নাকি গনতন্ত্র , নারী অধিকার, ট্রেড ইউনিওন, ইত্যাদি বিষয় লইয়া রাজনীতি চলিতেছে । ভাবিতেছি এসবকেই কিঞ্চিত স্বর্গলোকের উপযোগি করিয়া নির্বাচনে ব্যাবহার করিব। 

বিষ্ণু : কিন্তু ভ্রাতা তাতে কি ব্রহ্মাদেবের কোন ক্ষতি হইবে... শুনি ? 

শিব : কে বলে হইবে না... !! মনে কর আইজ যদি স্বর্গলোকে গনতন্ত্র আনি কি হবে ভেবে দেখেচো !!! তুমি আমি মিলিয়া যদি জোট করি, তবে ব্রহ্মা ব্যাটার কোন রাস্তা থাকবে পালানোর ... জোট করে আমরা না হয় ভাগেযোগে স্বর্গলোক শাষন করবো। তার পর মনে কর নারী অধিকার এর কথা যদি তোলা যায় তবে মেনকা, উর্বশী কে তখন ব্রহ্মা আর একা দখলে রাখতে পারবে না। আহা কতদিন হলো মেনকার সেই(!) মুদ্রা দেকিনে। গতকাল পোস্টারে দেকেচি  তার শরীরের চেকনাই আজকাল বড় বাড়িয়াছে । পেটের নিচে হাত নামাইতে নামাইতে বলিলেন মর্ত্য থেকে বদ্দ্যি এনে ব্রহ্মা ৮০ মুদ্রা খরচ করে মেনকার অপারেশন করেচে। শুনেছি এখন নতুন করে সব কাচুলি বানাচ্চে। বিষ্ণু কেমন যেন বিষন্ন হইয়া গেল ।
শিব আবার শুরু করলো , যদি প্রাইভেটাইজেশন চালু করা যায় তবে ভেবে দেকেচো কি লাভ হবে । একনতো ক্ষমতায় না থাকলে দেবার্ঘ ভাতায় চলতে হয় । নতুন দেবালয় তৈরির কাজ ব্রহ্মা একাই করিয়ে মুদ্রা নিয়ে যাচ্চে, তখন আর অটি হবে না । টেন্ডার দিয়ে তবেই কাজ করান যাবে । তখন সরকারে থাকলে কমিশন খাইবো , অপজিশনে থাকলে খাবো লাভ । কাজও আর ব্রহ্মা ব্যাটা একা একা সব বাগাতে পারবে না । 

বিষ্ণু : হুম... সেতো বুঝলাম কিন্তু ... ট্রেড ইউনিওন না কি জানি বলিলে সেটে কি হবে।

শিব : ট্রেড ইউনিওন হচ্ছে যারা কাজ করে অর্থ উপায় করে মানে কায়িক শ্রম যাদের দিতে হয় তাদের নিয়ে একটা দল করা হবে ।

সাথে সাথে বিষ্ণু জিবে কামর দিয়ে বললে এ হে হে শিব ভায়া কি বলছো , আমরা হচ্ছে আর্য আমরা আবার কবে কাজ করলাম । পাতালপুরিতে যে নন্দি ভিঙ্গি থাকে তারাও তো সারা জীবনে এক ঘড়া পানি নিজে নিয়ে খায় নি । এসব মত্যের জিনিস করে পরে না আবার জাত খোয়া যায় ।

শিব : আহা তুমি তো দেকচি কিছুই বুজলে না । আরে অনার্যরাই সব কাজ যে করে সে তো আমিও জানি । কিন্তু চিন্তা করে দেখ তারা যে রেগে আছে সেটা আমি ও জানি তুমি ও জানো আবার জানে ঐ ব্যাটা ব্রহ্মা। এখন যদি বোকা অনার্যগুলোকে ভুলিয়ে ভালিয়ে একবার হরতাল অবরোধে নিয়ে আসা যায় কি হবে চিন্তা করেচ। ব্রম্মার মাথার উপরে যে পাখা আছে সেটির আর কোন নড়ন চড়ন হবে না । মেনকা, উর্বশীকে নিয়ে যে ঘন্টায় ঘন্টায় আইসক্রিম খাচ্চে তার আসাও বন্ধ হবে । মুদ্রা দিয়েও তকন কিচ্চুটি হবার নয় ।

তখন ব্রহ্মা নিশ্চই বসে থাকবে না । কার্তিককে পাটাবে হত্তছাড়া অনার্যদের সায়েস্তা করতে । তখনি আমি ২টি ভায়ায় মিলে চিতকার করবো " গেল... গেল... সব গেল ।  স্বর্গলোকে  আজ পর্যন্ত যে কলঙ্ক ছুতে পারে নি । আমরা ২ টি ভায়াতে মিলে যে অপবাদ এর স্বর্গ লোকের উপর পড়তে দেইনি । আজ সে কলঙ্ক স্বগের গায়ে লাগলো । আজ ব্রহ্মার দোষে আমাদের স্বগ অপবাদের ডুবে গেল । যে স্বগে কোন দিন কটু কথা হয় নি আজ ক্ষমতার লোভে সেখানে আজ রক্তের বন্যা বইবার জন্য ব্রহ্মা কার্তিককে পাঠাচ্ছে অনার্য হত্যা করতে। কজন দেবতা আছে এই সব হরতালের পেছনে কে আছে , কে এসব করাচ্ছে তার খোজ নিতে যাবে । বলতো । সব গুলো তো খালি তোতার মত মাথা ঝাকিয়ে বলবে ঠিক ঠিক । শিবের কথায় যুক্তি আছে বিষ্ণুর কথায় যুক্তি আছে । এই করে যদি ইলেকশন পর্যন্ত কাটানো যায় তবে আর পায় কে । দেবতাদের মহত্ব নিইয়ে যকন প্রশ্ন করা হবে তকন আর ব্রম্মার উপায় থাকবে বল ।

বিষ্ণু ঃ ঠিকই তো ঠিকই তো । 

Popular posts from this blog

সিরাজুল আলম খান - ব্ল্যাক সোয়ান

মুক্তিযুদ্ধ চলা কালে ট্রেনিং সেন্টারে (ফোল্ডার হাতে) পরিচিতি :  সিরাজুল আলম খান, নোয়াখালীতে ১৯৪১ সালে জন্ম নেয়া এক জন ব্যাক্তি যে বাংলাদেশের জন্মের সাথে জড়িত অত্যান্ত নিবিড় ভাবে। অবিবাহিত একজন মানুষ যাকে বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে সম্মক অবহিতজনের কাছে পরিচিত রহস্যপুরুষ হিসাবে, এছাড়া রাজনৈতিক নেতাদের কাছে তিনি পরিচিত তাত্ত্বিক (theorist) হিসাবে। সিরাজুল আলম খান ভিন্ন ভিন্ন তিন মেয়াদে প্রায় ৭ বছর কারাভোগ করেন। সিরাজুল আলম খান মেধাবী ছাত্র হিসাবে শিক্ষায়তনে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সিরাজুল আলম খানের বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী অঙ্ক শাস্ত্রে হলেও দীর্ঘ জেল জীবনে তিনি দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা, রাজনীতি-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজ বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, সামরিক বিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, সংগীত, খেলাধুলা সম্পর্কিত বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেন। ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপর গড়ে উঠে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য এবং দক্ষতা। সেই কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক নিযুক্ত হন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন রাজ্যের অসকস বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৬-’৯৭ সনে। নি

প্রাগৈতিহাসিক - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

সমস্ত বর্ষাকালটা ভিখু ভয়ানক কষ্ট পাইয়াছে। আষাঢ় মাসের প্রথমে বসন্তপুরের বৈকুণ্ঠ সাহার গদিতে ডাকাতি করিতে গিয়া তাহাদের দলকে - দল ধরা পড়িয়া যায়। এগারজনের মধ্যে কেবল ভিখুই কাঁধে একটা বর্শার খোঁচা খাইয়া পলাইতে পারিয়াছিল। রাতারাতি দশ মাইল দূরের মাথা - ভাঙা পুলটার নিচে পেঁৗছিয়া অর্ধেকটা শরীর কাদায় ডুবাইয়া শরবনের মধ্যে দিনের বেলাটা লুকাইয়া ছিল। রাত্রে আরো ন ক্রোশ পথ হাঁটিয়া একেবারে পেহলাদ বাগ্দীর বাড়ি চিতলপুরে। পেহলাদ তাহাকে আশ্রয় দেয় নাই। কাঁধটা দেখাইয়া বলিয়াছিল , ' ঘাওখান সহজ লয় স্যাঙ্গাত। উটি পাকব। গা ফুলব। জানাজানি হইয়া গেলে আমি কনে যামু ? খুনটো যদি না করতিস _' ' তরেই খুন করতে মন লইতেছে পেহলাদ। ' ' এই জনমে লা , স্যাঙ্গাত। ' বন কাছেই ছিল , মাইল পাঁচেক উত্তরে। ভিখু অগত্যা বনেই আশ্রয় লইল। পেহলাদ নিজে বাঁশ কাটিয়া বনের একটা দুর্গম অংশে সিনজুরি গাছের নিবিড় ঝোপের মধ্যে তাহাকে একটা মাচা বাঁধিয়া দিল। তালপাতা দিয়া একটা

বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা

১৯২৬ সালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একটি ভাষন দেন যার নাম “বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা” । এটি বাঙলা প্রাদেশিক সম্মেলনে প্রদান করেন। পরে তা হিন্দু সংঘ পত্রিকায় ছাপা হয় ১৯ শে আশ্বিন ১৯৩৩ সালে। জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক  এর ভাষায় ১৯৩০ সালের দিকে প্রকাশিত শরৎচন্দ্রের বর্তমান হিন্দু মুসলমান সমস্যা পর এত ( আহামদ ছফার বাঙালি মুসলমানের মন ) প্রভোক্যাটিভ রচনা বাংলা ভাষায় পড়ি নাই। কোন একটা কথা বহু লোকে মিলিয়া বহু আস্ফালন করিয়া বলিতে থাকিলেই কেবল বলার জোরেই তাহা সত্য হইয়া উঠে না । অথচ এই সম্মিলিত প্রবল কন্ঠস্বরের একটা শক্তি আছে । এবং মোহও কম নাই । চারিদিক গমগম করিতে থাকে – এবং এই বাস্পাচ্ছন্ন আকাশের নীচে দুই কানের মধ্যে নিরন্তর যাহা প্রবেশ করে , মানুষ অভিভূতের মতো তাহাকেই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিয়া বসে । propaganda বস্তুত এই-ই । বিগত মহাযুদ্ধের দিনে পরস্পরের গলা কাটিয়া বেড়ানই যে মানুষের একমাত্র ধর্ম ও কর্তব্য , এই অসত্যকে সত্য বলিয়া যে দুই পক্ষের লোকেই মানিয়া লইয়াছিল , সে ত কেবল অনেক কলম এবং অনেক গলার সমবেত চীৎকারের ফলেই । যে দুই- একজন প্রতিবাদ করিতে গিয়াছিল , আসল কথা