আমার আসে পাশে খুব কম মানুষেরই ভুত দেখার অভিজ্ঞতা আছে। যাদের আছে , তাদের
অভিজ্ঞতাও কাটাছেড়া করলে পাওয়া যায় অনেক গোজামিল। সবার গল্পে দেখা যায় কিছু
জিনিস কমন থাকে , মনে হয় এই জিনিস গুলা না থাকলে গল্প বলিয়ের খুব সমস্যা
হয়ে যাবে । গল্পের মাধ্যমে যে একটা মিস্টি ভয়ের আবহ তৈরি করার চেষ্টা করা
হয় তা হবে না । গল্প জমবে না গলে যাবে লু হাওয়ার তোরে। যেমন গল্প গুলোর সময়কাল হচ্ছে রাত্রির বেলায়। যদি দিনের
বেলা হয় তবে তা অবশ্যই খুব সকালে বা বিকালে থাকবে , কারন সে সময় আলো কম
থাকে । এ ছাড়া সে সময় আপনাকে বৃষ্টির আভাসও দেয়া হবে । এর সাথে আরো অবধারিত
ভাবে লোক জনের উপস্থিতি অনেক কমিয়ে নিয়ে আসা হবে । ভূতেরা ভীড় পছন্দ করে
না । ভূতেরা বাড়ী (শ্যাওরা/বট গাছ) থেকে বের হবার সময় বাসা থেকে মনে হয় বলে দেয়
' খবরদার !! ভীড় থেকে দূরে থাকবে ।'
যদি গল্পে মাছের কোন উপস্থিতি থাকে তাবে তা ইলিশ বা গজার, বোয়াল, রুই এর মতো কোন মাছ হবে , সম্ভবত যখন থেকে ভূতের গল্পের প্রচলন সে সময়কার খ্যাদ্যতালিকাতে থাকা মাছের নাম না থাকলে শ্রোতার মনে ভীতি তৈরি করা যায় না । খানদানী বা ঐতিহ্যের একটা ব্যাপার আছে না । কখনো বেলে , পটকা , কাচকি মাছের কথা আমি পাইনি । মাংশের কথা তো খুজে পাওয়া অসম্ভব। মাংশ খেয়ে শরীর গরম করে ফেলবে নাকি !!!
ভুতের গল্পের আরেকটা জিনিস আমার কাছে ভাল লাগে এরা পরিবেশবাদী। গাছপালা , বনের উপস্থিতির সাথে এদের উপস্থিতিও মানুষের মনে অনাবিল ভয়ের আয়োজন করে । কখনো আমাদের দেশি ভূতের গল্পে বিরান ভূমির কথা থাকে না । থাকে না জনারন্যের কথা থাকে না । কিংবা নতুন বাড়ীঘরের কথা । এটা অবশ্য ভাল লাগে , নতুন বাড়ীঘরে নিশ্চিন্ত মনে একা একা ঘুমানো যায়। ভুতের ভয় থাকে না ।
তবে মাঝে মাঝে খারাপ লাগে ভুতেরা এতো অসামাজিক দেখে । এতো বেশি ট্রাডিশনাল দেখে
কবে আমি একটা গল্প শুনতে পাবো যেখানে ভূত গ্রীষ্মের দিনের কাঠফাটা রোদের গরমে চোখে ধাধা লাগানো আলোতে, সেনাকুঞ্জের বিয়ে অনুষ্ঠানে , হাজার মানুষের ভরা মজলিশে, গরুর মাংশ খাইতে খাইতে ওয়েটার কে বলবে
"বিফটা চেঞ্জ করে আনো , আর কয়েকটা শুকনা মরিচ নিয়ে আইসো। গরুর মাংশের সাথে শুকনা মরিচ খাইতে ভাল লাগে"